“The Truth is It’s a Dream, It’s a great joy”
– Javier Mascherano
উপরোক্ত কথাটি বলেছিলেন তিনি ২০১৮ সালের জানুয়ারীর ২৩ তারিখে , যেদিন তিনি বার্সার সাথে দীর্ঘ ৮ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন। সেদিন তার বিদায় বেলা উপস্থিত ছিল পুয়েল থেকে শুরু করে বার্সার অধিকাংশ সাবেক & বর্তমান ফুটবলাররা। কথাটি বলতে গিয়ে তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সময়টা ২০১০, পেপ গার্দিওয়ালার হাত ধরেই লিভারপুল ঘুরে তিনি বার্সায় পাড়ি জমালেন। ক্যাম্প নূ দূর্গে যখন নিজের ব্যাগপত্র নিয়ে নেমেছিলেন তখন হয়তো কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন নূ ক্যাম্প এর বিশালতা দেখে। তখন মাথায় চুলকানোর জন্য তার ঘন কালো চুল ছিল, কিন্তু নিজের অজান্তেই সেই চুল সময়ের পরিক্রমায় হারিয়ে ফেলেছেন, টেরই পাননি যে। সেই থেকেই বার্সায় তার পথচলা শুরু…
দলের প্রতি তার ডেডিকেশনটা ছিল অন্য পর্যায়ের। গোল সেলিব্রেশনে যখন অন্য ১০ জন খেলোয়াড় ব্যাস্ত,তখন তিনি নিজের খুশি বিসর্জন দিয়ে ছুটে যেতেন সাইড লাইনের দিকে। পরবর্তী দিক নির্দেশনা নিয়ে আসতেন কোচের কাছ থেকে। দীর্ঘ ৮ বছরে বার্সার সাইড লাইনে কোচ বদলেছিলো, কিন্তু গোলের পর কোচের দিকে দৌড়ে যাওয়াটা বদলায় নি। ক্যাপ্টেন আর্ম ব্যান্ড হাতে না জড়িয়ে ও তিনি ছিলেন একজন অধিনায়ক থেকে ও বেশি কিছু। তার ডেডিকেশন লেভেল শুধু বার্সার জন্য ছিল না, ছিল তার ন্যাশনাল আর্জেন্টিনার জন্য ও। মনে আছে কি নাইজেরিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপে বাঁচা-মরার ম্যাচে মাশ্চের লড়াইয়ের কথা? রক্তের প্লাটিনাম গুলো জমাট বাধতে সাহায্য করতেছিলো না। বাম চোখের কোনে ক্ষত স্থান থেকে রক্ত চুইয়ে চুইয়ে পড়তে ছিল! ছোট্ট একটা রক্তধারায়৷ লাল চপচপে করছে বাম গণ্ডদেশটা। কিন্তু তিনি রক্তের ছোপটা হাত দিয়ে মুছে ফেলছেন না। তিনি যেন দেখিয়ে দিচ্ছেন এভাবে রক্ত ঝরিয়ে, ঠিক এভাবেই সব রক্তবিন্দু যুদ্ধে করতে হয়। হ্যা এটাই হাভিয়ের মাশ্চারানো, একজন আর্জেন্টাইন প্রকৃত যোদ্ধা।
আজকের খেলা কখন, কোন চ্যানেলে দেখতে ক্লিক
২০১৪ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে রোবেনের বিপক্ষে তার ট্যাকেলটার কথা মনে আছে তো? কয়েক মূহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল পুরো বিশ্ব। একবার নিরপেক্ষ দৃষ্টি দিয়ে, একদম নিউট্রাল ভাবে ভাবুন তো এরকম বিপদের সময়ে, তাও শেষ মূহুর্তে এরকম ট্যাকেল কয়টা দেখেছেন? শুধুমাত্র এই একটা ট্যাকেল দিয়ে তাকে বর্ননা করে অপমান করতে চাই না আমি। মাথায় অনেকগুলো চুলের বোঝা নিয়ে এসেছিলেন তিনি, পা রেখেছিলেন ফুটবল নিয়ে সবুজ গালিচায়, আর ফিরে গেছেন শূন্য মস্তষ্কে, টাকলা হয়ে। মাঝখানে তার ঝড়ে যাওয়া প্রতিটা চুলের পেছনে জড়িয়ে রয়েছে কত না শতশত ট্যাকেল, কত না ম্যাচ বাচানো পারফরম্যান্স। এমনে এমনেতেই তো তারে বলা হয় নি দ্য ট্যাকেল মাষ্টার মাশ্চেরানো।
৮ বছরের বার্সা ক্যারিয়ারে মাটি খুঁড়ে যা ধনরত্ন বের করেছেন তার সবটা ঢেলে দিয়েছিলেন ভূস্বামীর পায়ে, তার বদলে আমাদের কাছ থেকে এক ভালবাসা ছাড়া আর কিছুই চাননি তিনি। বিদায় বেলায় তার ছলছলে চোখ দুটি বলে দেয় এই ভালবাসার নীড় ছেড়ে যেতে তার কতটা কষ্ট হচ্ছিল তার। কিন্তু আফসোস সময় এসব আবেগ, ভালবাসকে ধার ধারেনা। অতীতে যদি সময়ের থমকে যাওয়ার কোন উদাহরণ থাকতো, তাহলে তার ভালবাসার জন্য হলেও আরও কিছুদিন থেমে যেতো সময়টা, আমরা ও তাকে আরও কিছুদিন দেখতাম প্রানপ্রিয় সবুজ গালিচায়। আকাশে যত নক্ষত্র আছে, তার বেশির ভাগই নিজস্ব আলো আছে। নিজে জ্বলতে জ্বলতে একদিন নিঃশেষ হয়ে মিলে যায় কৃষ্ণগহ্বরের আলোতে! নিভে যাওয়া নক্ষত্ররা উৎসুক হয়ে চেয়ে থাকে আমাদের দিকে, ভাবতে থাকে তাদেরকে যেন কেউ খুঁজে। আমারও অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে তাদের খুঁজতে থাকি। একটা সময় ব্যার্থ হয়ে চোখ ফেলি অন্য নক্ষত্রের দিকে। কিন্তু দ্য লিটল চিফ, তুমি নিভে গেলও আমরা তোমায় খুঁজে নিবো।
শুভ জন্মদিন দ্য লিটল চিফ, দ্য গ্লাডিয়েটর হাভিয়ের মাশ্চেরানো