বিংশ শতাব্দীর প্রায় শেষ ভাগ। বিচলিত, সংশয়পূর্ণ মানব জীবনের গা ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছে বিজ্ঞান এবং টেকনোলজি। সেখানে খেলা করে উদ্দাম মানবের দল, উপড়ে ফেলা হয়েছে প্রকৃতির মায়াকে। শস্য-শ্যামলা বৃক্ষের বড্ড অভাব। রুক্ষ হয়ে উঠে প্রকৃতি, ফুঁটে ওঠে মলিন বৈধব্যচিত্র। কোনো এক আশা হননকারী অশান্তির প্রাদুর্ভাব গ্রাস করে শহরে।
ঠিক এ’মুহূর্তে গড়ে উঠে বৃক্ষের আদলে তরঙ্গাভিত এক সন্তান। শহরের কোনো কোণে সুর ধরে ঝিঁ-ঝিঁ পোকারা। মাটি চিঁড়ে, উদাত্ত কন্ঠের জোরে কেঁপে ওঠে ভূমি। সেখানে জগৎ-এর সাথে আলাপচারিতা সারতে থাকে কোনো এক বট বৃক্ষ। সে ফিরিয়ে আনে নিষ্কলুষিত শান্তি। তার ছায়াতে বসে রোজ রোজ শান্তি পোহায় তৃষ্ণার্ত পথিক। রাখাল বালক তার ডাল-পালা হতে পাতা সংগৃহীত করে আর জীবন বাঁচিয়ে তোলে তার গবাদি পশুর। সহসা বিকেলের আলো ক্ষীণ হয় আর মেঘেদের দলার ক্রন্দনে ফুঁলে-ফেঁপে ওঠে আকাশ-বাতাস। শঙ্কিত পাখিরা একে একে আশ্রয় নেয় সেই চিরাচরিত বট বৃক্ষের দেহে। বট দয়ালু! তাঁর কোনো রাগ নেই, বরং সে আপ্লুত হয়।
এমন চলতে চলতে ভালো সময় ফুরিয়ে আসে মাঝে মাঝে, তখন বট বৃক্ষকে ধ্বংস করতে উদ্যত হয় কিছু কাঠঠোকরা পাখি! ধারালো ঠোঁট দিয়ে সে আঘাত করতে থাকে বটের দেহে। কিন্তু সে যে আর কেউ না, স্বয়ং বট। এত পরিসর তাঁর, তাঁকে তো আর এত সহজেই ধ্বংস করা যায় না। এভাবেই সেকেন্ডের পর সেকেন্ড, মিনিটের পর মিনিট, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, যুগের পর যুগ ভূমিতে শিরদাঁড়া সোজা রেখে দাঁড়িয়ে থাকে সেই বটগাছটি।
আজকের খেলা কখন, কোন চ্যানেলে দেখতে ক্লিক করুন
ভারতীয় ক্রিকেটের রন্ধ্র-রন্ধ্রে ‘সুনীল গাভাস্কার’ শব্দ বোনা। ক্রিকেটের স্নায়ুতন্ত্রে বিলীন হয়ে গিয়েছে গাভাস্কার, কোত্থাও আর কেউ নেই, চারিদিকেই কেবল সুনীল। ঠিক যেমনটা ঘটে, ফুল কমতে থাকে, মালার সোহাগ কমতে থাকে আর কাহিনী ফুরিয়ে যায়; এক্ষেত্রেও কোনো ব্যতিক্রমী আত্মা ভর করেনি। ফিরতে হয়েছে ব্র্যাডম্যানকে, এবার ভারতীয় ক্রিকেটে পালা ছিলো সুনীল গাভাস্কারের। নদীর এক কূল ভাঙনের মুখে.. কিন্তু নদীর এক কূল ভাঙলে অপর কূলে গড়তে থাকে। ঈশ্বর এবার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন দক্ষতা-নৈপুণ্য, শ্রম-সিদ্ধিতে ভরপুর মুম্বাই নিবাসী ১৬ বছরের এক কিশোরকে।
বোম্বাই (বর্তমানে মুম্বাই) এর দাদর পার্কের এক সকালবেলা। সাল টা ১৯৮৪।
রমাকান্ত আচরেকর এর কাছে এসেছিলেন অজিত, তার ছোটো ভাইকে আচরেকর এর ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করানোর জন্য। কিন্তু, হলে কি হবে ? প্রথম ট্রায়ালেই ব্যাট হাতে চূড়ান্ত অসফল অজিতের ভাই।
রমাকান্ত বিরক্ত হয়ে অজিতকে বলছিলেন,
“না বাপু! এর দ্বারা হবেনা।“
অজিত বলেছিলেন,
“আপনি সামনে দাঁড়িয়ে আছেন বলে, মনে হয় ও নার্ভাস হয়ে পড়ছে!”
“তাহলে, অজিতবাবু, আমার কি করা উচিত ? মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়া ? যাতে আপনার ভাইই একা খেলতে পারে ? আর বাকিরা আমার কোচিং থেকে বঞ্চিত হোক?”
“স্যার, আপনি একটা চান্স দিন! ও স্কুলের হয়ে দুর্ধর্ষ পারফর্ম করেছে। কথা দিচ্ছি এখানেও করে দেখাবে।”
অগত্যা রমাকান্ত আচরেকার মনে কিছুটা কৌতুহল আর সংশয় নিয়ে, আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে, দাদর পার্কের একটা গাছের পিছনে লুকিয়ে পড়লেন; এবং, এরপরে, তিনি যেই জিনিস প্রত্যক্ষ করলেন, তাতে তিনি বুঝে গেছিলেন, যে এই বাচ্চা ছেলেটা, অনেক লম্বা রেসের ঘোড়া। স্ট্রেইট ডাইভ, কভার ড্রাইভ, হুক, ফ্লিক থ্রু মিডউইকেট, ব্যাকফুট, কাট শট সমস্ত শট ওই বাচ্চা ছেলেটি খেলে দেখালো।
আচরেকরের একাডেমীর সেই সময়কার টপার, বিনোদ কাম্বলির চোখেও তখন বিস্ময়!
কে এই ছেলেটা? কি করে এতো অল্প বয়সেই এতো ভালো, বিশ্বমানের
ক্রিকেট খেলতে পারে ?
আচরেকর এর মনেও প্রশ্ন তখন,
“ভারতের মাটিতে, এ কোন জাদুকরের ব্যাট হাতে বাইশ গজে অভিষেক ঘটলো?”সেটাই ছিলো শুরু!……