২৩ বছরের আর্থুরকে বিক্রি করে বার্সেলোনা জুভেন্টাস থেকে কিনতে যাচ্ছে ৩০ বছরের পিজানিককে। অনেকের মনে তাই প্রশ্ন জাগতেই পারে কেন বার্সেলোনা বোর্ড এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে?
আসুন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক:
বার্সেলোনার দলবদলের বাজারে টানাপোড়নের শুরুটা আসলে আর্থুরেরই আরেক স্বদেশী নেইমারের হাত ধরেই। ২০১৭ সালে নেইমার অনেকটা আকস্মিকভাবে দল ছাড়লে বিপদে পড়ে যায় বার্সা বোর্ড। মুখে অনেক কথা বললেও আদতে ঠিক ঐ সময়ে নেইমারের মতো খেলোয়াড়ের রিপ্লেসমেন্ট খুঁজে নেওয়া এক প্রকার অসম্ভবই ছিলো।
একদিকে টানা দুই বছর চ্যাম্পিয়ন্স লীগ না জেতা আরেকদিকে দলের দ্বিতীয় সেরা খেলোয়াড়ের দল ছাড়া, সমর্থকদের চাপা ক্ষোভ এবং নিজেদের মিস ম্যানেজমেন্ট সামাল দিতে বার্সা বোর্ড তখন দুটি ট্রান্সফারকে পাখির চোক করে। লিভারপুল থেকে তাদের তৎকালীন সেরা খেলোয়াড় কৌতিনহো এবং বরুশিয়ার তরুন তুর্কী দেম্বেলেকে।
নেইমারের ট্রান্সফার ফি ২২২ মিলিয়ন বার্সার হাতে অনেক টাকা; তাদের ইমিডিয়েট একজন খেলোয়াড় কিনতেই হবে; এটা পুরা ইউরোপের কাছেই খোলাসা ছিলো আর সে সুবিধাটাই কাজে লাগিয়েছে প্রত্যেকটি ক্লাব। লিভারপুল সামার ট্রান্সফারে কোন রকমেই কৌতিনহোকে ছাড়েনি তাদের ডিমান্ড ছিলো ১৫০ মিলিয়ন ইউরো! বার্সা সে সময়ে আপাত দৃষ্টিতে পিছনে হঠলেও উইন্টার ট্রান্সফারে নানা নাটকীয়তার পর ১৪০ মিলিয়ন ইউরার বিনিময়ে এই ট্রান্সফার করে নেয়। এদিকে দেম্বেলেকে আগেই ১২০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে দলে ভেঁড়ায়।
এই দুটি ট্রান্সফারের এবং সেখানে তাদের অফার করা বেতন কাঠামোর সাথে মরার উপর খাড়ার ঘাঁ এর মতো বার্সা বোর্ড আরেকটি ভুল করে পরবর্তীতে গ্রীজম্যানকে ১২০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে সাইন করিয়ে। বোর্ডের দূরদর্শিতার অভাব আরেকবার নগ্নভাবে ফুটে উঠে এখানে। টানা তিনটি বড় বড় ট্রান্সফারের সাথে ছোট বড় ট্রান্সফার মিলিয়ে বেশ বড় অংকের টাকা খরচ করে বার্সেলোনা কিন্তু তার বিপরীতে খেলোয়াড় বিক্রিতে একেবারেই যাচ্ছেতাই অবস্থা।
যার ফলশ্রুতি বর্তমানে বলির পাঁঠা হচ্ছে আর্থুর মেলো; যদিও অনেক বার্সা সমর্থকদের মতে আর্থুর সময় পাওয়ার পরও এখনো তেমন কিছু করে দেখাতে পারনি। যাকে এক সময়ে জাভির যোগ্য উত্তরসূরি ভাবা হচ্ছিলো আজ কেন হঠাৎ করে বার্সা তাকে ছেড়ে দিচ্ছে? উয়েফার ফিনানশিয়াল রুলস এর আওতায় যাতে না পড়তে হয় সেটার জন্যই বার্সা বোর্ড এই কাজ করছে যা একেবারেই স্পষ্ট। তবে রয়েছে আরো কিছু কারন-
ট্রিনাকো, স্পোটিং ব্রাগা থেকে গত উইন্টার ট্রান্সফারেই ৩১ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে এই পর্তুগীজ মিডফিল্ডারকে কিনে নেয় বার্সেলোনা; বর্তমানে ব্রাগাতেই লোনে খেলা এই খেলোয়াড় জুলাইতেই যোগ দিচ্ছেন বার্সেলোনাতে। আর্থুরকে বিক্রি করে পিজানিককে প্রায় একই দামে কিনলেও বার্সেলোনা মূলত ট্রিনাকোতেও ভরসা রাখতে চাচ্ছে। ট্রিনাকোর সবচেয়ে বড় গুন একই সাথে ভিন্ন ভিন্ন পজিশনে খেলতে পারা যদিও রাইট মিড তার সবচেয়ে সাচ্ছন্দের যায়গা।
কৌতিনহো এবং দেম্বেলের কাউকেই বিক্রি করতে না পারা; বর্তমান বাজারে কোন ক্লাবই দেম্বেলে এবং কৌতিনহোকে বার্সেলোনার খরচ করা অর্ধেক টাকা দিয়েও কিনতে আগ্রহী না থাকায় অনেকটা বিপদে পড়েই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বার্সেলোনার বোর্ডকে।
ট্রান্সফার ব্যান, গত কয়েক সীজনে বেশ বড় বড় অংকের টাকা খরচ করে খেলোয়াড় কিনলেও তার তুলনায় খেলোয়াড় বিক্রি করে আয় একেবারে নেই বল্লেই চলে বার্সেলোনার এই জুনের মধ্যে সেই আয় দেখাতে না পারলে উয়েফার ট্রান্সফার ব্যান অবধারিত। আবার বার্সেলোনায় থাকা অন্য কোন খেলোয়াড় বিক্রি করে বর্তমানে খুব বেশি টাকা পাওয়া যাবেনা সেটাও বার্সা বোর্ড অবগত তার কারনেই কোপ আর্থুরের উপরে।
জুভেন্টাসেরও ফিনানশিয়াল ইস্যু ঠিক রাখা, বার্সেলোনার মতো জুভেন্টাসেরও আগামী সীজনে খেলোয়াড় কেনায় কোন রকম সমস্যায় না পড়তে দুই ক্লাবের মধ্যে এটা এক প্রকার ফিনানশিয়াল ডিলই বলা চলে। আর্থরকে ৭০ মিলিয়ন দিয়ে কিনে জুভেন্টাস জুনের আগে বার্সেলোনা বোর্ডকে সহযোগিতা করতেছে আবার ঠিক জুনের পরপরই পিজানিকের জন্য ৬০ মিলিয়ন পরিশোধ করে বার্সেলোনাও জুভেন্টাসকে সহযোগিতা করবে। এতে করে দুই দলেরই খেলোয়াড় কেনা বেচায় উয়েফা নির্ধারিত ফিনানশিয়াল ইস্যুতে আয় দেখানো সহজ হবে। যার ফলে নতুন সীজনে খেলোয়াড় কেনায় নতুন করে টাকা খরচ করতে কারোরই আর বাঁধা থাকবেনা।